.

.

সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

খেজুরের কাঁচা রস পানে মৃত্যুঝুঁকি

By on ৫:০৭ PM
শীতকালে খেজুরের রস খায় না এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ছোটছোট শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও খেজুর গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হাঁ করে গাছ থেকে টপটপ করে পরা খেজুরের কাঁচা রস খেতে প্রচণ্ড ভালবাসে। কিন্তু এই কাঁচা রস পান যে বিষ পানের সমতুল্য তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। হ্যাঁ, খেজুরের এই কাঁচা রস পানে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে শুরু করে মৃত্যুও হতে পারে। আসুন জেনে নিই বিস্তারিত।
খেজুরের কাঁচা রস খেলে নিপাহ নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হবে মানুষ। নিপাহ ভাইরাসের বাহক প্রধানত বাদুড়। শীতকালে বাদুড় খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার সময় রসের মধ্যে এই নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার ঘটায়। ফলে বাদুড়ের মুখ দেওয়া নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত এই কাঁচা খেজুরের রস পানের মাধ্যমে মানুষ আক্রান্ত হয়। একইভাবে বাদুড়ে খাওয়া ফল খাওয়ার মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়ায়।
ইনস্টিটিউট ফর ইপিডেমিওলোজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ও আইসিডিডিআরবি এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, রাতে বাদুড় খেজুর গাছে বাঁধা হাঁড়ি অথবা নল থেকে রস খাওয়ার সময় লালার সঙ্গে নিপাহ ভাইরাস রসে যায়। সেই রস যারা খায় তারাই নিপাহ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয় এবং মারা যায়। এর কোনো চিকিৎসা বের হয়নি। নিপাহ ভাইরাস মিশ্রিত খেজুর রস যারা পান করেছে তাদের সবারই জ্বর হয়, অচেতন হয়, খিচুনি হয়, বমিসহ মাথাব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এমনকি মৃত্যুও হয়। এই রোগকে মস্তিষ্ক প্রদাহ বা এনসেফাইটিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় অজ্ঞাত রোগ হিসেবে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ধরা পড়ে। ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম এই ভাইরাস দেখা দেয়। মালয়েশিয়ায় নিপাহ নামক গ্রামে এই ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে বলে ভাইরাসটিকে ‘নিপাহ’ নামে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে শীতকালে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেকেরই মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
নিপাহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাঃ
যেহেতু নিপাহ ভাইরাসের জন্য কোনো প্রতিষেধক টিকা নেই, তাই আমাদের উচিত সচেতন থাকার মাধ্যমে ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করা।
১। কাঁচা খেজুরের রস পান না করা এবং পাখি দ্বারা আধা খাওয়া ফল না খাওয়া।
২। আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে এ রোগ। তাই যারা রোগীদের সেবা দিয়েছেন এবং মৃতদের সৎকার করেছেন, তাদের  দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
৩। আক্রান্তদের পরিচর্যা করতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী ভালোভাবে     পরিষ্কার না করে আবার ব্যবহার করা যাবে না।
৪। রোগীর পরিচর্যা করার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৫। রোগীর কফ ও থুতু যেখানে সেখানে না ফেলে একটি পাত্রে রেখে পরে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৬। রোগীর সঙ্গে একই পাত্রে খাওয়া বা একই বিছানায় ঘুমানো যাবে না।
৭। রোগীর শুশ্রুষা করার সময় মুখে কাপড়ের মাস্ক পরে নিতে হবে।
৮। যে এলাকায় নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, সে এলাকায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ হওয়ার পর আরো অন্তত ২১ দিন পর্যবেক্ষণ চালিয়ে  যেতে হবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন